স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের একের পর এক ঘটনায় জাতি আজ উদ্বিগ্ন। চলমান নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে যেন আর কোন নারী ও শিশুকে নির্যাতনের শিকার হতে না হয়। কর্মজীবী নারী আজ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার, বিকাল সারে তিনটায় মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে নারী ও শিশু নির্যাতনের চলমান ঘটনার প্রতিবাদে এক মাবনবন্ধন এর আয়োজন করে।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারীর উপর সহিংসতা নতুন কোন বিষয় নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের নারী যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে; ছেলে শিশুরা ও বলাৎকার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টা বা যৌন হয়রানি, উত্যক্তকরণ, এসিড আক্রমণ সহ নানাবিধ সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। দেশের প্রতিটি নারী ও শিশু সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মূল কারণ নারীকে মানুষ হিসাবে গণ্য না করার দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণ। আদিকাল থেকে সমাজের চিন্তা-চেতনা নারীকে অধস্তন অবস্থানে রাখে। নারী বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি এক দিকে নারীর উপর সহিংসতা করার প্রবণতা তৈরি ও লালন করে এবং প্রয়োগ করে,অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার নারীকেই দোষারোপ করে। সহিংসতাকারী বিনা বিচারে পার পেয়ে যায় বা বিচারের আওতায়ই আসে না।
নারীর উপর নির্যাতন এবং সহিংসতার মাত্রা, ধরন ও নিষ্ঠুরতা বেড়েছে বহুগুণ। নারী বিদ্বেষী মানসিকতা, আচরণ ও সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে।
এ আচরণ যেই করুক, যেখান থেকেই আসুক, এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীর উপর সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ঘটনার তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ, ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের আস্থা ও আশ্রয়স্থলে উন্নীত করতে হবে; সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপ-রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে হবে।
আমাদের আহ্বান: নারী ও শিশুর উপর সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নির্মাণ করি, দেশে আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ও ঐক্যবদ্ধ হই, সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুকে সকল সেবা পেতে সাহায্য করি, সহিংসতার ঘটনা লুকিয়ে না রেখে অভিযোগ দাখিল করতে সাহায্য করি , নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নারীর জন্য লজ্জা না বরং নির্যাতনকারীর লজ্জা, তাই যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষারোপ করার চর্চা বন্ধ করি, ভোগ্য বস্তু নয় নারীকে মানুষ ভাবি।
বিচার বিভাগের কাছে আবেদন:
আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করুন
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করুন।
সরকারের কাছে দাবি:
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল এবং প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সক্রিয় করুন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন
থানা, হাসপাতাল ও আদালতকে নারী বান্ধব করার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করুন,
পাঠ্যসূচীতে নারীর প্রতি নেতিবাচক ও বৈষম্যমূলক বিষয় পরিহার করুন, ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরুন,
সরকারী দলিল সমূহ এবং প্রচার মাধ্যমে নারীকে নিয়ে অবমাননাকর শব্দ-বাক্য ব্যবহার বন্ধ করুন,
জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নারীর উপর সহিংসতা, যৌননির্যাতন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত সকল আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা নিয়মিত পরিবীক্ষণ এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিন।
আসুন আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই
নারীর উপর যেকোন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো এবং রুখে দাঁড়াব; কোন অবস্থায়ই আমরা সঙ্কুচিত হব না, ভীত হব না, পিছপা হব না। আর একজন নারীকেও ধর্ষণের শিকারহতে দেব না, একজন পুরুষকে ও ধর্ষক হতে দেব না।
Link: bdsangbadmela | PDF