প্রেস বিজ্ঞপ্তি
তারিখ: ২৪/০৮/২০২১

ইয়াসমিন হত্যার ২৬ বছর
আসুন নারী’র উপর সকল প্রকার নিপীড়ন-সহিংসতা প্রতিরোধে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বত্র সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তুলি

২৪ আগস্ট ২০১৯ গৃহশ্রমিক ইয়াসমিন হত্যার ২৬ বছর। ইয়াসমিনকে স্মরণ করে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে কর্মজীবী নারী’র সভাপতি ড. প্রতিমা পাল মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন কবীর, সহ-সভাপতি উম্মে হাসান ঝলমলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নারী’র প্রতি নিপীড়ন-সহিংসতা প্রতিরোধে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ইয়াসমিন হত্যার ২৬ বছর পরও একই ঘটনা এখনও চলছে। আজকের দিনেও দুই থেকে সাত বছরের শিশু ধর্ষিত হচ্ছে। এরা কেমন পুরুষ! এদের বিরুদ্ধে গণজাগড়ন গড়ে তুলতে হবে। সেই সাথে নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বিচার নিষপত্তির জন্য নতুন আইন করতে হবে। আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান আপনারা কোন অপরাধীর পক্ষে দাঁড়াবেন না। সেইসাথে এমন একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যেন শিশুরা একা স্কুলে যেতে পারে, খেলতে পারে, একা নারীরা চলাফেরা করতে পারে। রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ইয়াসমিনের হত্যাকারীদের ফাঁসি আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। কিন্তু ইয়াসমিন হত্যার ২৬ বছর পেরুলেও নারী নির্যাতন বন্ধ তো হয়নি, বরঞ্চ ছোট ছোট মেয়েশিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ঘৃণ্য অপরাধীরা অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য ধর্ষণের পর হত্যাও করছে। নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, খেটে-খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যেই স্বপ্ন নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেখানে আমরা বার বার হোঁচট খাচ্ছি। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে ! ঘুরে-ফিরে একই প্রশ্ন বার বার নির্যাতন ও সহিংসতা কেন কমছে না, কোথায় আমাদের গলদ ? বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচিত্র অভিনেত্রী পরীমনিকে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে! কেন ? নারী বলেই কি পরীমনির প্রতি এই অমানবিকতা, অবিচার?

নেতৃবৃন্দ, পরীমনিসহ সকল নারীর জন্য ন্যায় বিচার দাবি করেন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। সেই সাথে প্রশাসনকে নারী নির্যাতন বন্ধে এগিয়ে আসা এবং দায়িত্ব পালনে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের ২৪ শে আগস্ট দিনাজপুর শহরের রামনগর মহল্লার এক সহজ-সরল কিশোরী ইয়াসমিন কর্মস্থল ঢাকা থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলো মায়ের সাথে দেখা করতে। পুলিশ নামের নরপিশাচরা তাকে ধর্ষণ করে লাশ ফেলে দেয় দিনাজপুর শহরের ৫ কিলোমিটার দুরে ব্র্যাক অফিসের পাশে রান্তায়। ২৬ আগষ্ট রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করা কালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা কোতয়ালী থানার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে। ২৭ আগষ্ট বিক্ষুব্ধ জনতা প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলিসহ দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবীতে বিশাল মিছিল বের করলে পুলিশ সেই মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় ৭ জন নিহত ও আহত হয় ৩ শতাধিক, জারি হয় ১৪৪ ধারা, মোতায়ন করা হয় বিডিআর। সামু, কাদের ও সিরাজের লাশ পাওয়া যায় কিন্তু বাকি ৪টি লাশ পুলিশ গুম করে ফেলে। জনগণের রোষ আরো বেড়ে যায় এতে, তারা শহরের ৪টি পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিক্ষোভের দাবানল জ্বলে ওঠে দিনাজপুরের ১৩ থানাসহ সারা দেশব্যাপী। দিনাজপুর থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় আট বছর পর, ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই থেকে প্রতিবছর ২৪ আগষ্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

বার্তা প্রেরক
হাছিনা আক্তার, সমন্বয়ক (এইচ আর এন্ড এডমিন), কর্মজীবী নারী

Pin It on Pinterest