-শিরীন আখতার এমপি | PDF File
আজ ১৩ মার্চ ২০২২ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর, আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২ এবং কর্মজীবী নারীর ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ ও মাদক রুখতে এবং টেকসই আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নারী ও নারীশ্রমিক শান্তি সমাবেশ ও পাঁচ হাজার নারী ও নারী শ্রমিকের মিছিল ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিরীন আখতার এমপি বলেন, এ বছর আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি। গত ৮ মার্চ ছিলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লৈঙ্গিক সমতার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের স্বীকৃতি দানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী আমরা পালনকরি দিনটি। এ বছরের নারী দিবসে জাতিসংঘের স্লোগান ছিলো ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’। নারীর প্রতি সবরকম বৈষম্য ও অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটিয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে পুরুষের সমান অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা আরও বেগবান হোক। “নারী-পুরুষের সমতা, টেকসই আগামীর মূল কথা” (Gender equality today for a sustainable tomorrow)—এই প্রতিপাদ্যে এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয়।
নারী-পুরুষের সমতা বলতে কি বুঝি তা তো আপনারা জানেন!
কিন্তু আপনারা কি জানেন টেকসই উন্নয়ন কি?
টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে, আপনারা আজ যে এই সমাবেশে এসেছেন এজন¨ আপনাদের পরিবারের পুরুষদের সালাম জানাই। তারা আপনাদের আজ এই অনুষ্ঠানে আসতে দিয়েছেন। কোন বাঁধা দেয়নি। এটাই টেকসই উন্নয়ন। এই যে আজকের এই সমাবেশে হাজার হাজার নারী উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের পথে কেউ বাঁধা দিয়েছেন। দেয়নি। এটাই টেকসই উন্নয়ন। বাড়ী থেকে সমাবেশে এসেছেন, রাস্তা-ঘাট ভাঙ্গা পেয়েছেন, পাননি। ভাঙ্গা ব্রিজ পেয়েছেন? পাননি। এটাই টেকসই উন্নয়ন। সোলার বিদ্যুৎ পৌছেছে গ্রামে গ্রামে। শতভাগ বিদ্যুৎ পেয়েছেন ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম উপজেলার মানুষ। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় নতুন একাডেমিক ভবন নির্মান করেছি । মসজিদ, মন্দির ও কবরস্থানের সংস্কার কাজ করেছি। এগুলোই টেকসই উন্নয়ন।
কিন্তু এতসব উন্নয়নের পরেও আমাদের সমালোচনা করার মানুষের অভাব নেই। নারীর চলার পথে বাধা দেয়ার মানুষের অভাব নেই। তারা আসলে এ দেশের উন্নয়ন চায়না। তারা এ জাতীর শত্রু। তাই নারীর অগ্রযাত্রা এবং বাংলাদেশের টেকসউ উন্নয় অব্যাহত রাখতে এ দেশ হতে জঙ্গী, সন্ত্রাসী এবং মৌলবাদী অপশক্তির শিকড় উৎপাটন করতে হবে।
দেশ যখন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হানিসার নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল তৈরি করেছে। তখন দেশে আজ দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি। নিত্য পণ্য মানুষের ক্রয়সিমার বাহিরে। কিন্তু এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। যারা এ দেশের টেকশই উন্নয়ন মেনে নিতে পারেনা। জঙ্গী মদদ দাতা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, আগুন সন্ত্রাসী, যারা এ দেশকে আফগান বানাতে চায় তারা আজ বাজার সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। জনগণকে এই সরকারের বিপক্ষে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য তেল, ডালসহ নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা করছে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার পরিচালিত হচ্ছে, সেই সরকার এত সহজে তাদের এ ষড়যন্ত্র সফল হতে দিবে না।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় আমি নিন্দা জানাচ্ছি। আমি মনে করি—এটা বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে রাখা সম্ভব। সেইসঙ্গে বলতে চাচ্ছি, সামনে রোজাকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানি হয়ে গেছে। সুতরাং, সে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
তাই সরকারের কর্তা-ব্যক্তিদের প্রতি আমার উদাত্ব আহবান, দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি বন্ধ করুন। দায়িত্ব নিন, দুর্নীতির সিন্ডিকেটকে ধ্বংস করার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, ‘গণতন্ত্রের বাগান থেকে রাজাকারদের এবং অর্থনীতির ঘর থেকে দুর্নীতিবাজদের বিতাড়িত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক শান্তি আসবে। যারা নির্বাচনের কথা বাদ দিয়ে সরকার উৎখাতের প্রস্তাব দিচ্ছে, তারা ছদ্মবেশে ভূতের সরকার, অস্বাভাবিক সরকার ও চক্রান্তের সরকার ক্ষমতায় আনার পাঁয়তারা করছে।’
রবিবার (১৩ মার্চ) বিকাল ৩ টায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায় নারী ও নারীশ্রমিক শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা, উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চেীধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া তাহের, কর্মজীবী নারী’র সাধারণ সম্পাদক শারমিন কবীর, নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সানজিদা সুলতানা প্রমুখ।
সমাবেশের শুরুতে প্বিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয়। দিয়ে শূরু হয় সমাবেশের কর্মসূচী। জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সমাবেশের সূচনা করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে সমাবেশ স্থলে বাংলাদেশের মানচিত্র স্থাপন করা হয়। অতিথিবৃন্দ ওই মানচিত্র গোলাপ ফুল দিয়ে ভরাট করেন। এরপর মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশাত্ববোধক গান ও নাচ পরিবেশন করা হয়।
সমাবেশ শেষে পাঁচ হাজার নারী ও নারী শ্রমিকের এক বিশাল বর্নাঢ্য মিছিল বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন শিরীন আখতার এমপি। বর্নাঢ্য মিছিলটি ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাইলট হাইস্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হয়।