আজ ৩০ জানুয়ারি কর্মজীবী নারী ও কেয়ার বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে দিনব্যাপী ‘সমতার পথে নারীশ্রমিক নেতৃত্বের যাত্রা’ এই আহ্বানে বিয়াম ফাউন্ডেশন, ঢাকা-এর অডিটোরিয়ামে গার্মেন্টস শিল্পের নারী শ্রমিক সম্মিলনের আয়োজন করেছে। উক্ত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও উদ্বোধনী ঘোষণা করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি। উদ্বোধনী অধিবেশনে কর্মজীবী নারীর সভাপতি এবং ঐক্য প্লাটফর্মের সদস্য ড. প্রতিমা পাল-মজুমদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন Ms. Rensje TEERNK, Ambassador and the Head of Delegation to Bangladesh. স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়া চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন কর্মজীবী নারী’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক। অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আক্তার পারভীন, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ফেরদৌসী বেগম ও সিডব্লিউএ’র নেতৃবৃন্দ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, নারী ও শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের অধিকার রক্ষা ও নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। তবে এক্ষেত্রে আপনাদেরও অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক লড়াই টিকিয়ে রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে তিনটি খুঁটির উপর তা হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পের নারীশ্রম, এক কোটি প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স এবং গরীব কৃষক ও কৃষিশ্রম। তাই নারীশ্রমিকদের সম্মান-মর্যাদা-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তৈরি পোশাক খাতসহ সকল কর্মক্ষেত্রে যৌনহয়রানি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নারীর তিন প্রধান শত্রু সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধীদের বর্জন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. প্রতিমা পাল-মজুমদার প্রধান অতিথির বক্তব্যের সাথে একমত পোষন করে বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নারীশ্রমিকদের যথাযথ সম্মান ও অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার, ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের একসাথে কাজ করতে হবে। কারণ ২০১৪ সালের এক গবেষণায় আমরা পেয়েছি যে, তৈরি পোশাক শিল্পের ৭৬% নারীশ্রমিককে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় না। এর ফলে তারা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং অস্বস্তি নিয়ে কাজ করে।
দিনব্যাপী সম্মেলনের প্যানেল ডিসকাশনের সঞ্চালনা করেন কেয়ার বাংলাদেশের নারী ও কন্যা শিশু ক্ষমতায়ন প্রোগ্রাম এর পরিচালক হুমায়রা আজিজ। তৃণমূলে নারী নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের উপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ ও সিডব্লিউ এ-র লিডার শারমিন আক্তার; কর্মক্ষেত্রে নারীকর্মীদের চ্যালেঞ্জের উপর বক্তব্য দেন গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম ও সিডব্লিউএ-র লিডার তাসলিমা; নারীশ্রমিকদের দক্ষতার উপর করণীয় এর উপর বক্তব্য দেন গার্মেন্টস দর্জি শ্রমিক কেন্দ্রের সভাপতি শাহিদা সরকার সিডব্লিউএ-র লিডার সীমা এবং নারীশ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে করণীয় এর উপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার ও সিডব্লিউ এ-র লিডার নাসিমা।
সমাপনী অধিবশেনে সভাপতিত্ব করেন শিরীন আখতার এমপি, সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, কর্মজীবী নারী। সমাপনী অধিবেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, এমপি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার। শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ও সদস্য, ঐক্য প্লাটফর্ম ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সম্মিলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামিমা আক্তার শিরিন। এছাড়াও এ আয়োজনে জাতীয় পর্যায়ের শ্রমিকনেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকগণ উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।