প্রেস বিজ্ঞপ্তি
তারিখ: ২৭/১২/২০২১ |PDF
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠনের সঙ্গে ‘নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভা’
“অভিবাসী নারীশ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি”
কর্মজীবী নারী এবং সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে এবং এপিডব্লিউএলডি এর সহযোগীতায় আজ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ সোমবার সকাল ১১টায়, ঢাকাস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠনের সঙ্গে নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় করণীয় বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক মাহমুদা বেগমের সভাপতিত্বে এবং কর্মজীবী নারীর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানার সঞ্চালনায় অভিবাসী নারীশ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের পথ শীর্ষক একটি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা সকলের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হয়। তিন জন নারী অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদা ইয়াসমিন, পরিচালক, বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এ্যাসোসিয়েশন (বোমসা); রীনা রায়, নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারীপক্ষ এবং মমতাজ আরা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারী ও নারী অধিকার বিষয়ক ১৫টি সংগঠন ও অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত নারীশ্রমিকগণ।
মত বিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদা বেগম বলেন, একত্রিত হয়ে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। আজকের আলোচনা এই জন্য যেন কোন নারীকে আর লাশ হয়ে ফিরে আসতে না হয়, যেন আর কোন নারী নিযাতিত না হয়, যেন আর কোন শিশুকে পাচার হতে না হয়। দালালরা জানে যে কারা দুর্বল, তাদেরকে ধরার চেষ্টা করে এবং সারা পৃথিবীতে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নারী ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে যেসব সংগঠন তাদের একত্রিত হয়ে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, কোভিডের কারণে এক লক্ষ নারীশ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। এ সময় তারা সবচেয়ে বেশি ‘ওয়েজ থেফট’ এর শিকার হয়েছে। আমাদের দেশের নারীদের টাকা ছাড়া বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও ৫৮ শতাংশ নারী টাকা খরচ করে বিদেশে যাচ্ছেন। ৬৪ শতাংশ নারী অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে কাজের চুক্তিপত্র পান না। দেখা গেছে, দালালরা ২৫ শতাংশ নারীকে বয়সের ভুয়া সনদ দিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছে। সরকারের প্রচুর পৃষ্ঠপোষকতা আছে কিন্তু তথ্য না জানার কারণে নারীরা এই সেবা নিতে ব্যর্থ। অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ২২ ধারা সংশোধন করে কর্মঘন্টা, বিশ্রাম, ছুটি- এই বিষয়গুলো চুক্তিপত্রের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অভিবাসী আইন ২০১৩ এ মাত্র একটি কমার কারণে রিক্রুটিং এজেন্সিরা জবাবদিহিতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইএলও ১৯০ অনুস্বাক্ষরিত না হওয়ায় সাধারণত নারীশ্রমিকদের সমঝোতা চুক্তিতে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে, এতে তারা যেমন অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে এবং অপমৃত্যুর ক্ষেত্রে তাদের ন্যায় বিচার দেয়া যাচ্ছে না। বহু দেশের সাথে আমাদের সিডও চুক্তি স্বাক্ষর করা আছে তাই আমরা এই চুক্তি ধরে সামনে এগোতে পারি। দালালদের আইনের অন্তর্ভুক্ত করা এবং দূতাবাসে যেসব আইন ও সেবা আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হোক বলে তিনি সুপারিশ করেন।
রীনা রায় বক্তব্যে বলেন, নারীশ্রমিকরা যেখানে কাজ করার কথা সেখানে কাজ পেল কি না, তার কর্মঘন্টা, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে কোন মনিটরিং নেই, এই মনিটরিং এর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের কমিউিনিটি পর্যায়ে গ্রুপ করে প্রি ডিসিশন, দক্ষতা নিয়ে আলোচনাসহ বিভিন্ন তথ্য সরবারহ করার কাজ নারী ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো করতে পারে। গন্তব্য দেশে বাংলাদেশের অভিবাসী আইন ২০১৩ কার্যকর নয়। আবার গন্তব্য দেশের শ্রম আইন অভিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমাদের সুপারিশ হলো গন্তব্য দেশে অভিবাসী ও সাধারণ মানুষের জন্য একই শ্রম আইন যেন প্রনয়ণ করা হয়।
মমতাজ আরা তার বক্তব্যে বলেন, র্যামিটেন্স আমাদের প্রধান আয়ের উৎস। অথচ এই খাতে যারা কাজ করে তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। তাদেরকে পর্যাপ্ত খাবার না দেয়া হয় না, ২৪ ঘন্টা কাজ করানো, পরিবারের সকলে মিলে রেইপ করা, এইসব নির্যাতন তাদের উপর চলে। আমি সুপারিশ করবো স্বরাস্ট্রমন্ত্রলায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, পুলিশ সকলকে একসাথে অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ওরিয়েন্টেশন এর ব্যবস্থা করা উচিত এবং পাঠ্যপুস্তকে র্যামিটেন্স এবং অভিবাসনকে বিষয়বস্তু হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত করা হোক।
মত বিনিময় সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো:
- অভিবাসন প্রত্যাশী নারীদের জন্য গন্তব্য দেশ অনুযায়ী যুগোপযোগী তিনমাসব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- নারীর অভিবাসন নিরাপদ করতে বিদেশ যাবার তার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা। অভিবাসী নারীর সাথে যেন অবশ্যই ফোন থাকে এবং সরকারিভাবে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়।
- চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ ঠেকাতে নারীরা যেন ভিসা অনুমোদনের পর পরই সরকারি ঋণ সুবিধা পায়।
- নারীর অভিবাসন নিরাপদ করতে ও বৈধ অভিবাসনের জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে অভিবাসন সেল গঠন করা। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পাসপোর্ট অফিস থাকা।
- দালালের প্রভাব কমাতে থানা পর্যায়ে এজেন্সির শাখা থাকা
- একেকটি সেবা পেতে একেক যায়গায় যাবার অসুবিধা দূর করতে সরকারিভাবে একটি সমন্বিত সংস্থা থাকা, যেখানে এক সাথে সব সুবিধা পাওয়া যাবে।
- বিদেশে অভিবাসীদের নিয়ে সরকারিভাবে মত বিনিময় সভা করা।
- শ্রম শোষণ বন্ধে বিদেশে নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা ও ছুটির ব্যবস্থা করা।
- নির্যাতন বন্ধে গন্তব্য দেশের সাথে সমন্বয় করে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
- দেশে ফেরার পর অভিবাসী নারীর জন্য মনো-সামাজিক কাউন্সিলিং, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারে।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা রোধে বিদেশ ফেরত অভিবাসী নারীদের কমিউনিটি তৈরি করা
- অভিবাসী নারীকে সমাজে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনা বৃদ্ধি করা।
বার্তা প্রেরক,
ইসরাত জাহান পপি,
প্রোগ্রাম অফিসার,
কর্মজীবী নারী
যোগাযোগ: ০১৭৮০৩৭৪৪১২