Co-funded by the European Union | PDF

“কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুস্বাক্ষর ও শ্রম আইনের সংশোধন”

বিষয়ক
জাতীয় সংলাপ

ধারণাপত্র
আমরা জানি, অর্থনীতির চাকা ঘোরে শ্রমিকের শ্রমে ও ঘামে। খাদ্যের নিশ্চয়তা, অর্থনীতিকে সচল রাখা, দেশকে স্ব-নির্ভর রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার পেছনে আছে শ্রমজীবীদের অক্লান্ত পরিশ্রম যেখানে নারীশ্রমিকের অংগ্রহণ ক্রমশ: বাড়ছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক উভয়খাতে নারীশ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও কর্মস্থলে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যায় নি, প্রতিরোধ করা যায় নি কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি। অথচ আমরা জানি, কর্মক্ষেত্রে যে কোন ধরনের যৌন হয়রানি মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা।

কর্মজীবী নারী ২০১৯ সালে ‘তৈরি পোশাক কারখানায় নারীবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ’ সংক্রান্ত এক গবেষণা পরিচালনা করে। এই গবেষণাটি ৩২৭ টি পোশাক কারখানার ৩,০১৪ জন নারী শ্রমিকদের সাথে পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ নারী শ্রমিক মৌখিক হয়রানির এবং ৬২ শতাংশ নারী শ্রমিক মানসিক হয়রানির অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও, ২১ শতাংশ নারী শ্রমিক শারীরিক হয়রানির এবং ১৪ শতাংশ নারী শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক খাত – যেমন পোশাক শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের এই চিত্র থেকে আমরা অনুমান করতে পারি অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা নারীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ, কারণ তাদের জন্য এখনো পযন্ত কোন আইনী কাঠামো গড়ে ওঠে নি।

লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কর্মক্ষেত্রে নারীশ্রমিকের প্রতি সহিংসতা, হয়রানি এবং বৈষম্য একটি চলমান সমস্যা হলেও এই ঘটনাগুলি প্রায়ই প্রকাশিত হয় না। কারণ দরিদ্র নারীশ্রমিকরা আশঙ্কা করেন যে, তারা সহিংসতা ও হয়রানি বিষয়ে অভিযোগ করলে তাদের চাকরির নিরাপত্তা থাকবে না। বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কা আরও বেড়েছে, যেখানে বেঁচে থাকার প্রয়োজন শ্রমিকদের অধিকার উপেক্ষা করার যুক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই কারণে কর্মজীবী নারী এবং শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান ও অংশীদাররা মনে করে যে, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অধিকতর আইনি সুরক্ষার দাবী করার সময় এখনই।

কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালের ১৪ মে মহামান্য হাইকোর্ট সকল প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১১টি দফা সম্বলিত সুনিদির্ষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন যেগুলো প্রতিপালন করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব। অন্যদিকে ২০১৯ সালে আইএলও “কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসন কনভেনশন-১৯০” (“ইলেমিনেশন অব ভায়োলেন্স এন্ড হেরাসমেন্ট ইন দি ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক” প্রণয়ন করে যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এই কনভেনশনটি এখনো অনুস্বাক্ষর করেনি।

আমরা মনে করি, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালের মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম আইনের সংশোধন করা হবে নাকি কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রতিরোধে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হবে – এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ঠ নীতিমালা ঠিক করা আজ সময়ের দাবী। একইসাথে বাংলাদেশ সরকারকর্তৃক আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুস্বাক্ষরেরদাবী আজ সকলের। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানী বন্ধে এই কনভেনশনটি বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত হলে তা এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেমন সুদৃঢ় করবে তেমনি বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে বলে আমাদের বিশ^াস ।

এই প্রেক্ষাপটে “কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুস্বাক্ষর ও শ্রম আইনের সংশোধন” বিষয়ক একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। এই সংলাপের উদ্দেশ্য হল:

➢ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালের মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে যেন একটা সুস্পট গাইডলাইন পাওয়া যায় সে বিষয়ে এবং
➢ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আইএলও’র “কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসন কনভেনশন-১৯০”-এর অনুস্বাক্ষর বিষয়ে সংলাপ

জাতীয় সংলাপটি কর্মজীবী নারী কর্তৃক ‘একতায় মর্যাদা’ – প্রকল্পের কার্যক্রমের আওতায় আয়োজিত হচ্ছে। প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং টেরে ডেস হোমস ইটালিয়া, কর্মজীবী নারী ও সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়া এই সংলাপটি আয়োজনে সহযোগিতা করছে শ্রম অধিকার বিষয়ক দুটি নেটওয়ার্ক – শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (এসএনএফ) ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক (উডজঘ)।

উক্ত সংলাপে অলোচ্য বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য বিষয়সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারক, শ্রম অধিকার বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান/এজেন্সি, ট্্েরড ইউনিয়ন, গবেষক এবং মিডিয়া প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরা আশা করছি আয়োজিত সংলাপের মাধ্যমে একদিকে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গ যেমন আইএলও কনভেনশন-১৯০ ও শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন অন্যদিকে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে আয়োজন সংস্থাসমূহ ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা পাবে। এছাড়া আইএলও কনভেনশন অনুসমর্থন ও বাস্তবায়নে এ সংলাপের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সুপারিশমালা প্রণীত হবে যা কার্যকর হলে কর্মক্ষেত্রে সকল প্রকার সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা: ৬০ জন
অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের ধরন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ব্যক্তিবর্গ, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ এবং শ্রমিক প্রতিনিধি।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতিসহ আয়োজক সংস্থাসমূহের নাম:

কর্মজীবী নারী: এটি বাংলাদেশের একটি অলাভজনক, বেসরকারি নারী- নেতৃত্বাধীন সংগঠন যারা ১৯৯১ সাল থেকে নারী ও নারীর অধিকার, মর্যাদা, ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। সংগঠনটি প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের সংগঠিত করা, সচেতন করা ও নেতৃত্ববিকাশে উদ্যোগ নিয়ে থাকে। নারী ও নারীশ্রমিক বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে এবং শ্রমিক অধিকার বিষয়ে সরকার, নীতি নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে অ্যাডভোকেসি করে থাকে।

সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন: সংস্থাটি ২০০৫ সাল থেকে সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের সন্তানদের জন্য পড়াশোনা, চিকিৎসা, দিবাযত্নকেন্দ্র, কমিউনিটি উন্নয়ন ইত্যাদি পরিসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

টেরে ডেস হোমস ইতালিয়া: এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বাংলাদেশে ১৯৯৬ সাল থেকে স্থানীয় অংশীদারদের সাথে নিয়ে কাজ করছে। টিডিএইচ ইতালিয়া-এর প্রকল্পগুলি মূলত কিশোর -কিশোরীদের ক্ষমতায়ন এবং সুরক্ষা, নিরাপদ অভিবাসন, শ্রমিকদের অধিকার এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষাগত সহায়তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে।

গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক (Domestic Worker’s Rights Networks (DWRN): ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি নাগরিক সামাজিক প্ল্যাটফর্ম যা গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার পক্ষে কাজ করে এবং শ্রম আইনের আওতায় গৃহকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল শক্তিকে একত্রিত করে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জোরালো আওয়াজ তুলে শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে সংগঠিত করে এবং তাদের অধিকার আদায়েরজন্য সোচ্চার কণ্ঠস্বর।

শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (Workers’ Safety Forum (SNF): ২০০৫ সালে জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠন, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, শ্রমিক অধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কর্মরত উন্নয়ন সংস্থার সম্মিলিত প্লাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। শ্রমবান্ধব নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও তাদের সহায়তাকল্পে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম-এসএনএফ’ ভুমিকা রাখছে। এছাড়া সবার জন্য নিরাপদ কাজ এই লক্ষ্য নিয়ে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম’ সরকার, নীতি নির্ধারক ও কারখানার মালিকদের সংগঠন/সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে অ্যাডভোকেসি, জনমত গঠন এবং বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তা প্রদানে কাজ করছে।

Pin It on Pinterest